মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪, ০৩:৪৬ অপরাহ্ন

১৫ দিনেই সাত মাসের চেয়ে বেশি ডেঙ্গু রোগী

১৫ দিনেই সাত মাসের চেয়ে বেশি ডেঙ্গু রোগী

স্বদেশ ডেস্ক :

দেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ এখনো নিয়ন্ত্রণে আসছে না। প্রতিদিন গড়ে ২০০ জনের বেশি ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব বলছে, দেশে গত সাত মাসে যে পরিমাণ ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে, তার থেকে অনেক বেশি শনাক্ত হয়েছে চলতি মাসের ১৫ দিনে। গত জুনয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত মোট ২ হাজার ৬৫৮ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। আর চলতি মাসের ১৫ দিনেই গতকাল রবিবার দুপুর পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩ হাজার ৪৪২ জন। এই সময়ে মারা গেছেন ২১ জন।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হলেও হাসপাতালে ভর্তি হননি এমন রোগীর সংখ্যাই বেশি। তবে সেই রোগীর কোনো পরিসংখ্যান পাওয়া যায় না। যারা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন তাদের মধ্যে ৮০-৯০ শতাংশ রোগীকে হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন হয় না। তারা চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে বাসায় অবস্থান করে থাকেন।

সাধারণ এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গু ছড়ানোর মৌসুম হলেও এ বছরের মে মাস পর্যন্ত এর তেমন কোনো প্রকোপ দেশে দেখা যায়নি। কিন্তু জুন থেকে ডেঙ্গুজ্বরের রোগী বাড়তে শুরু করে। দেশের ডেঙ্গু রোগীর তথ্য সংগ্রহ করে থাকে অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন ও কন্ট্রোল রুম। ঢাকা শহরের ১২টি সরকারি, ২৯টি বেসরকারি হাসপাতালসহ মোট ৪১টি হাসপাতাল থেকে তারা তথ্য সংগ্রহ করে। এ ছাড়া দেশের ৬৪টি জেলা সিভিল সার্জন অফিস থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। কন্ট্রোল রুমের তথ্যানুযায়ী, রাজধানীতে আগের দিন সকাল ৮টা থেকে গতকাল একই সময় পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৯৮ জন। এই রোগীদের মধ্যে ঢাকা শহরের ১৮৯ জন আর ঢাকার বাইরে ৯ জন রয়েছেন। গত জুনয়ারি থেকে গতকাল দুপুর পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৬ হাজার ১০০ জন। ডেঙ্গুতে এখন পর্যন্ত ২৫ জন মারা গেছেন। যাদের মৃত্যুর তথ্য রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে (আইডিসিআর) জমা হয়েছে। ডেঙ্গুতে আক্রান্তদের ১ হাজার ৪৯ জন বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এবং হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে ৫ হাজার ২৬ জন বাড়ি ফিরেছেন।

বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের সাবেক উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. মোজাহেরুল হক বলেন, এখন ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছে। ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার বংশবিস্তারের সঙ্গে দুটো জিনিসের সম্পর্ক রয়েছে। একটি হচ্ছে থেমে থেমে বৃষ্টি ও অন্যটি আমাদের বাড়ির ভেতর বা বাইরে পানি জমে থাকা। এই জায়গাগুলোয় এডিস মশার লার্ভার জন্ম হয়। এই লার্ভা যেন না হতে পারে সে জন্য পানি জমতে দেওয়া যাবে না। যেখানে পানি জমে, সেখানে লার্ভা নিধনে লার্ভিসাইট স্প্রে করতে হবে। কারণ এখন করোনার প্রাদুর্ভাব চলছে। ডেঙ্গু ও করোনা দুটি আলাদা রোগ। দুটো রোগের প্রকোপ বাড়লে মৃত্যুর সংখ্যা আরও বেড়ে যাবে। এতে আমাদের চিকিৎসক, নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের ওপর চাপ আরও বাড়বে। তাই আমাদের কাজ হবে এডিশ মশা যেন বংশবিস্তার করতে না পারে সেদিকে নজর দেওয়া।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবু ইউসুফ ফকির বলেন, এপ্রিল থেকে অক্টোবর এডিস মশার উপদ্রব বাড়ে। সুতরাং এখন ডেঙ্গুজ্বরের মৌসুম। প্রতিনিয়ত ডেঙ্গু রোগী বাড়ছে। তাই এডিস মশা যেন বংশবিস্তার করতে না পারে, সে জন্য ঘরের ভেতর ও বাড়ির আশপাশ পরিষ্কার রাখতে হবে। কোথাও পানি জমতে দেওয়া যাবে না। দিনের বেলায় বাসাবাড়িতে মশানাশক স্প্রে করে দরজা-জানালা কিছুক্ষণ বন্ধ রাখতে হবে। এ ছাড়া মশক নিধনে পদক্ষেপ নিতে হবে সিটি করপোরেশনকেও।

ডা. আবু ইউসুফ আরও বলেন, ডেঙ্গু আর করোনার উপসর্গের মধ্যে মিল আছে। সে কারণে কারও জ্বর, শরীরে ব্যথা হলে দুটি রোগের পরীক্ষা একসঙ্গেই করাতে হবে। এর পর ডেঙ্গু বা করোনা যেটাই শনাক্ত হয়ম, তার সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা শুরু করতে হবে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877